ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​দায় এড়াতে টালবাহানা, বোর্ড চেয়ারম্যানের ভর্ৎসনা

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৭-১০-২০২৪ ০৬:০৯:১২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৭-১০-২০২৪ ০৬:২৬:৪০ অপরাহ্ন
​দায় এড়াতে টালবাহানা, বোর্ড চেয়ারম্যানের ভর্ৎসনা
রাজধানীতে সঞ্চালন লাইনে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বিদ্যুৎকর্মী হতাহতের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে আরো তথ্য সংযুক্ত করে তা দ্রুত দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেডের বোর্ড চেয়ারম্যান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক। রোববার (২৭ অক্টোবর) বিদ্যুৎ ভবনে ডিপিডিসির বোর্ডরুমে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় তিনি এই নির্দেশ দেন। 
সভাটি সকাল ১১ টায় শুরু হয়ে দুপুর একটা পর্যন্ত চলে। সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (এসি) পর্যন্ত সবাই উপস্থিত ছিলেন। এর বাইরে সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলীরা অনলাইনে (জুম) সংযুক্ত ছিলেন। 
জানা যায়, বোর্ড চেয়ারম্যান সভা শুরুর আগে ডিপিডিসির গঠিত এক সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন। তিনি প্রতিবেদনে আরো তথ্য সংযুক্ত করে তা দ্রুত দাখিলের নির্দেশ দেন। সূত্র জানায়, নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) মোরশেদ আলম খান তখন দুর্ঘটনার দায় এড়াতে বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে নানা অজুহাত তুলে ধরেন। তিনি ওই সময় মানিকনগর এলাকায় যে পিডিএসডি প্রকল্প থেকে উচ্চচাপ তার পরিবর্তন হবে এবং এর জন্য যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হবে তা তিনি জানতেন না বলে দাবি করেন। এতে বোর্ড চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে ভর্ৎসনা করেন।
এরপর এহছানুল হক বোর্ডরুমে এসে ডিপিডিসির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলীদের কাছ থেকে মানিকনগরের দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তথ্য শোনেন। সভা শুরুর পর তিনি প্রথমেই পিডিএসডি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের কাছে দুর্ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা শুনতে চান। ওই সভাতে যোগদানকারী একাধিক প্রকৌশলী জানান, বোর্ড চেয়ারম্যান মানিকনগরে প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ ও চালু করার সময় আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কাজের আগে প্রয়োজন কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিদ্যুৎলাইন বন্ধ করার সময় সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবে কোম্পানির নিয়ম অনুসরণের নির্দেশনা দেন। 
সূত্র জানায়, মো. এহছানুল হক বিভিন্ন বিষয়ে কর্মকর্তাদের কঠোরবার্তা দিয়েছেন। তিনি মাঠ পর্যায়ে বিদ্যুৎলাইনে কাজ করার সময় নিরাপত্তার বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন। দুর্ঘটনার কারণে দুই-এক দিনের মধ্যে আরো কয়েকজন শীর্ষ প্রকৌশলীকে কৈফিয়ত তলব এবং কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, দুর্ঘটনার পর বাংলা স্কুপের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বেশকিছু তথ্য উঠে আসায় বিদ্যুৎ বিভাগে শুরু হয়েছে তোলপাড়। দুর্ঘটনার দিন প্রভাবশালী ওই নির্বাহী পরিচালকের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত। জানা যায়, গত সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) পর্যন্ত সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ নোমান চারদিনের ছুটিতে ছিলেন। আর তখন সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) মোরশেদ আলম খান। তিনি ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার সংবাদটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করার বিষয়টি প্রকৌশলীরা ভিন্ন চোখে দেখছেন। এতে করে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। একটি দুর্ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সঙ্গে সঙ্গে বোর্ড চেয়ারম্যান, বিদ্যুৎ সচিব ও উপদেষ্টাকে অবহিত করার বিধান রয়েছে। মোরশেদ আলম খান এর কোনটাই করেননি। উল্টো তিনি ওই সময় ঘটনাটি বেমালুম চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেন, যা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। সূত্র জানায়, এর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। 
সূত্র আরো জানায়, এই দুর্ঘটনার দায় থেকে পিডিএসডি প্রকল্পের প্রকৌশলীদের বাঁচাতে মোরশেদ আলম খান নানা রকম টালবাহানা করছেন। নির্বাহী পরিচালকের (প্রকৌশল) দায়িত্বে থেকেও এই দুর্ঘটনার দায় নিতে তিনি নারাজ! 
বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে মোরশেদ আলম খান বিদ্যুৎবিভাগ ও বিদ্যুৎ বিতরণী বিভিন্ন কোম্পানিগুলোতে দাঁপিয়ে বেরিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনিও ভোল পাল্টেছেন। এখন তিনি ভিড়ে গেছেন বিএনপিসমর্থিত প্রকৌশলীদের সঙ্গে। ডিপিডিসির বিএনপিসমর্থিত প্রকৌশলীদের বড় একটি অংশ এখন তাঁকে রক্ষা করার জন্য মাঠে নেমেছে। আর এ কারণেই প্রাণহানির মত দুর্ঘটনার পরও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে সূত্রের দাবি। 
দুর্ঘটনা নিয়ে গঠিত ডিপিডিসির তদন্ত কমিটি প্রধান নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ এম শফিকুল ইসলাম বাংলা স্কুপকে মুঠোফোনে জানান, আজ (রোববার) আমি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। বোর্ড চেয়ারম্যান মো. এহছানুল হক স্যার প্রতিবেদন দেখেছেন। তিনি আরো তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দ্রুত দেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে শফিকুল ইসলাম বলেন, সেটা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলবেন। তবে তিনি পিডিএসডি প্রকল্প পরিচালক ও ওই প্রকল্পে নিয়োজিত প্রকৌশলীদের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, রাজধানীতে সঞ্চালন লাইনে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক বিদ্যুৎকর্মী নিহত ও দুইজন আহত হন। সোমবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মানিকনগর এলাকায় উচ্চচাপ (এইচটিক্যাবল) বিদ্যুৎ লাইনের তার পরিবর্তনের কাজ করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বাংলা স্কুপ/প্রতিবেদক/এসকে

​নড়েচড়ে বসেছে ডিপিডিসি : ‌দুর্ঘটনার দায় নিতে নারাজ মোরশেদ আলম
​মানুষের মৃত্যুর কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না : বিদ্যুৎ উপদেষ্টা
 
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ